বিশ্ব উষ্ণায়ন ও তার প্রতিকার (Global Warming and how to prevent it)

 বিশ্ব উষ্ণায়ন  ও তার প্রতিকার (Global Warming and how to prevent it)
 বিশ্ব উষ্ণায়ন
বিশ্ব উষ্ণায়ন 

রচনা সূত্র:ভূমিকা- বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণ- বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাব-প্রতিরোধ ব্যবস্থা- উপসংহার

"দাও ফিরে সে অরণ্য - লও এ নগর ,
লও যত লৌহ লোষ্ট্র কাষ্ঠ ও প্রস্তর সভ্যতা"।
                                     রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

ভূমিকা:

         শতাব্দীর সূর্য যখন মধ্য-গগনে তখন সভ্যতার সর্বনাশী খেলার ফলশ্রুতিতে মানবজীবনে ঘনিয়ে আসে বিশ্ব উষ্ণায়নের অভিশাপ।দ্রুত নগরায়ন ও শিল্পায়নের হাত ধরে প্রাকৃতিক সম্পদ লুণ্ঠন ও নির্বিচারে বৃক্ষ ফল হল পৃথিবীর ক্রমবর্ধমান উষ্ণতা। বিশ্ব প্রকৃতির ভারসাম্য বিভিন্ন হওয়ার বর্তমান যুগে উত্তরোত্তর উষ্ণতার পরিমান বৃদ্ধি পাচ্ছে। উষ্ণতার এই ক্রমবর্ধমান দশায় বৈজ্ঞানিক পরিভাষায় বিশ্ব উষ্ণায়ন বা গ্লোবাল ওয়ার্মিং নামে পরিচিত।

        বায়ুমণ্ডল অবস্থিত কার্বন-ডাই-অক্সাইড, মিথেন, জলীয় বাষ্প প্রভৃতি গ্রীন হাউজ গ্যাস প্রকৃতিতে বজায় থাকে। কিন্তু কোন ভাবে তাদের পরিমাণ বেড়ে গেলে ভূপৃষ্ঠ থেকে বিকৃত রূপে ফিরে এসে বাড়িয়ে তোলে তার উষ্ণতা। উনিশ শতকের মধ্যে বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা গড়ে প্রায় ১ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড করে বেড়ে গেছে।

বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণ:

         বিজ্ঞানীরা বিশ্ব উষ্ণায়নের অনেকগুলো কারণ নির্দিষ্ট করেছেন -১)বিভিন্ন জীবাশ্ম জ্বালানি দহনের ফলে বায়ুমন্ডলে কার্বন-ডাই- অক্সাইড ক্রমবৃদ্ধি, ২) শস্যক্ষেত্রে অতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশক  প্রয়োগ এবং জৈবমল ও পচিত  উদ্ভিদের মাত্রা বৃদ্ধির ফলে বায়ুমন্ডলে মিথেন গ্যাসের পরিমাণ বর্ধন,৩) কৃষি ক্ষেত্রে নির্বিচারে নাইট্রোজেন ব্যবহার ৪) শিল্পক্ষেত্রে দ্রাবক, এরোসেল ,প্লাস্টিক, ফোম ও প্রাত্যহিক জীবনে ব্যবহৃত ঠান্ডা মেশিন গুলি ব্যবহারের ফলে ক্লোরো-ফ্লোরো-কার্বনের ( CFC) পরিমাণ বৃদ্ধি, ৫) উন্নত জনজীবনের প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে ক্রমবর্ধমান বৃক্ষচ্ছেদনের অবশ্যম্ভাবী পরিণতি বিশ্ব উষ্ণায়ন।


বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাব: 

        বিশ্ব উষ্ণায়নের ভয়াবহ পরিণতিতে বরফাচ্ছাদিত পর্বত, অন্তহীন সমুদ্র, কল্লোলিত ঝর্ণা ও নদী, হিমময় মেরুদেশ, বিস্তীর্ণ মরুরাজ্য,গভীর অরণ্য, জীবনে কলরবে মুখরিত জনপদ ক্রমে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে। ১৯৮২ থেকে পেরুর সমুদ্র উপকূলে সৃষ্ট "এল নিনো"(El Nino) নামক আবহাওয়ার এক জটিল প্রক্রিয়া অতিবৃষ্টি অনাবৃষ্টি সমস্যাকে ক্রমাগত জটিলতর করে তুলেছে।

        সমীক্ষায় জানা গেছে,উত্তর মেরুর বরফ অধ্যুষিত অঞ্চলে বরফ এর পরিমাণ ৫.৯ মিলিয়ন বর্গ মিটার থেকে ১.৯ বর্গমিটারে পর্যবসিত হয়েছে এবং অচিরেই তা সম্পূর্ণ অপসৃত হয়ে সমুদ্রের বিশাল জলোচ্ছ্বাস সৃষ্টি হবে বলে বিজ্ঞানীদের ধারণা।

        বিজ্ঞানীদের অপর অনুমান, ক্রমপ্রসারমান উষ্ণায়নের প্রভাবে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমে গিয়ে শুষ্ক মরুরাশিতে পূর্ণ হয়ে যাবে সমগ্র পৃথিবী কীটপতঙ্গের বংশবৃদ্ধি ঘটবে জলের গুনগতমান কমে গিয়ে প্রাণীদের প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস পাবে। সর্বাংশে ধ্বংস হয়ে যাবে প্রকৃতি ও পৃথিবী।

প্রতিরোধ ব্যবস্থা:

     
১৯৬৫-তে আমেরিকার বিজ্ঞানীদের মধ্যে প্রথম বিশ্ব উষ্ণায়নের ভয়াবহতা বিষয়ে উদ্বিগ্নতা প্রকাশ পেয়েছে। এই বিষয়ে ১৯৭৯-এ জেনেভা সম্মেলন(Geneva Conference), ২০০৭-এ  অপর এক সম্মেলন আয়োজিত হয় ।অনুমান করা যায়, জীবাশ্ম জ্বালানির দহনে কমিয়ে, অপ্রচলিত শক্তি ও জৈব সারের ব্যবহার বাড়িয়ে, পেট্রোলিয়াম এর অপচয় রোধ করে এবং সর্বোপরি নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন বন্ধ করেও বনসৃজন ঘটিয়ে উষ্ণায়নের কমানো সম্ভব হবে।
পৃথিবী টাকার থেকেও বেশি মূল্যবান
পৃথিবী টাকার থেকেও বেশি মূল্যবান 

উপসংহার: 

        শিক্ষিত, বিজ্ঞান সচেতন মানবগোষ্ঠীর সর্বাগ্রে প্রয়োজন নিজেদের মধ্যে বিশ্ব উষ্ণায়নের কুফল বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। আগামী প্রজন্মকে অবশ্যম্ভাবী ধ্বংসের অভিমুখ থেকে প্রত্যাগমন করানোর জন্য বিশ্ববাসীকে এগিয়ে আসতে হবে। তাছাড়া স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা, ধর্মীয় গোষ্ঠী, সরকার সকলকেই সাধ্যমত প্রয়াসী হতে হবে। প্রয়োজনে দেশের সরকার বা রাষ্ট্রপুঞ্জে ও বলিষ্ঠ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে আমাদের কাছে অন্য কোনো প্ল্যানেট - B  অপশন নেই ।
আমাদের কাছে অন্য কোনো প্ল্যানেট - B  অপশন নেই
আমাদের কাছে অন্য কোনো প্ল্যানেট - B  অপশন নেই




পরিবেশ রক্ষায় ছাত্রছাত্রীদের ভূমিকা (Students Role to Protect Environment)

পরিবেশ রক্ষায় ছাত্রছাত্রীদের ভূমিকা (Students Role to Protect Environment)
 Plantation(বৃক্ষরোপণ)
পরিবেশ রক্ষায় ছাত্রছাত্রীদের ভূমিকা

     আমাদের চারপাশের সবকিছু নিয়েই আমাদের পরিবেশ। সুস্থভাবে বাঁচার জন্য সুস্থ পরিবেশ একান্ত প্রয়োজন। অথচ সেই পরিবেশে মানুষের  অনন্ত চাহিদা আর অপরিমেয় লোভের শিকার হয়ে ক্রমশ তার ভারসাম্য হারিয়ে ফেলছে। বাতাস, জল, মাটিতে দূষণের মাত্রা বিপজ্জনকভাবে বাড়ছে।

কলকারখানা থেকে নির্গত বিষাক্ত ধোঁয়া
Industrial Pollution(কলকারখানা থেকে নির্গত বিষাক্ত ধোঁয়া)
             যানবাহনের কলকারখানা থেকে নির্গত বিষাক্ত ধোঁয়ার মানুষ সর্দি-কাশি, হাঁপানি ,নিউমোনিয়ার মতো অসুখে আক্রান্ত হচ্ছে বা তার ব্যাধির প্রকোপ বাড়ছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে গাছপালা ,এমনকি জড় জগৎও। কলকারখানার বর্জ্য পদার্থ, কৃষি কাজে ব্যবহৃত রাসায়নিক সার কীটনাশক জ্বালানি ,হিসেবে ব্যবহৃত তেল প্রতিনিয়ত দূষিত করে তুলছে। এসব বর্জ্যে, শহরাঞ্চলে আবর্জনায় আর জঞ্জালে মাটি ও দূষিত হচ্ছে। যানবাহনের প্রবল শব্দ ,শব্দবাজি ,মাইক্রোফোনের উচ্চশব্দ স্নায়ুতন্ত্রকে বিকল করে দিচ্ছে , বধিরতা সৃষ্টি করছে, হৃদস্পন্দনের হারে তারতম্য রক্তচাপের হ্রাস বৃদ্ধির কারণ হয়ে উঠছে ।পারমাণবিক অস্ত্র কে ত্বরান্বিত করে তুলছে।

                 যন্ত্রসভ্যতার বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে জীবনের  ক্রমবর্ধমান চাহিদাকে মূল্য দিতে মানুষ তার উন্নতি আর স্বাচ্ছন্দ্যের লক্ষ্যে পরিবেশকে প্রতিনিয়ত আঘাত করছে ।উপেক্ষা করছে প্রকৃতিকে। বাসস্থানের প্রয়োজনে নির্বিচারে অরণ্য ধ্বংস করছে। বিজ্ঞান আর প্রযুক্তির লক্ষ্যে ভুলে গেছে পরিবেশের ভারসাম্যের দিকটিকে। এই দূষণ এর কবল থেকে বাঁচতে বিশ্বের প্রতিটি মানুষকে দায়িত্ব নিতে হবে।

         পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন হয়ে ওঠার পাশাপাশি তাকে সুস্থ রাখার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা নিতে
Students role to protect Environment
Students Campaign
পারে অদম্য প্রাণশক্তিতে  উদ্দীপ্ত তরুণ ছাত্র সমাজ। কেননা তারা ভবিষ্যতে সুনাগরিক পরিবেশ সুরক্ষায় পরিকল্পনা ও পরিবেশের উন্নয়নের দায়িত্ব তারা নিলে তাদের ভবিষ্যৎ অনেক সুন্দর ও স্বাস্থ্যকর হয়ে উঠবে। যারা সচেতন নয়, তাদের সচেতন করে তোলার লক্ষ্যে ছাত্রছাত্রীরা এগিয়ে আসতে পারে। দলবদ্ধভাবে পরিবেশ বিষয়ক বিভিন্ন পোস্টার, ফেস্টুন, চার্ট তৈরি করে শোভাযাত্রার মাধ্যমে, বিদ্যালয়ে অরণ্য সপ্তাহ বা বিশ্ব পরিবেশ দিবস এর মতো অনুষ্ঠানের প্রয়োজন করে এ কাজে তারা সামিল হতে পারে।

            বৃক্ষরোপণ ও বন সংরক্ষণের ব্যাপারে বায়ু দূষণ শব্দ দূষণ জল দূষণ রোধে ছাত্র ছাত্রীরা সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরে নিজেদের দাবি জানাতে পারে। প্লাস্টিক ব্যবহারের ক্ষতি সম্পর্কে মানুষকে অবহিত করতে পারে। দূষণমুক্ত পরিবেশে গড়ে তোলার আবেদন জানিয়ে আলোচনা সভা ও  পথনাটিকার আয়োজন করতে পারে। এছাড়াও ক্যুইজ ,বক্তৃতা, বিতর্ক, আলোচনা সভা আয়োজনের মধ্যে দিয়ে, পরিবেশ বিষয়ক প্রকল্প নির্মাণ,প্রাচীরপত্র লিখন, দেয়াল পত্রিকা লিখন এবং সংবাদপত্রে  প্রতি যে গান রচনার মাধ্যমে ও পরিবেশ সুরক্ষায় ছাত্রছাত্রীরা সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতে পারে।